স্যার আজকে অঙ্ক করব না, প্লিজ স্যার"
তমার করুণ আকুতি। সবে ক্লাস এইটে পড়ে, এখন
থেকেই ফাজিলের চুড়ান্ত। আজকালকার
ছেলেমেয়েরা বোধহয় এরকমই। আমার
আগে কোনোদিনও টিউশনির অভিজ্ঞতা ছিলো না,
নিছক ঝোঁকের মাথায় এটা শুরু করি। আজকে এক
মাস পূর্ণ হবে, মাসের দুই তারিখ। বেতন পাওয়ার
সময়টাও হয়ে গেছে। জীবনের প্রথম নিজের
উপার্জন। ঘটনাটা তাহলে একটু খুলেই বলি।
আমার বন্ধু তাজিনের কাজিন হয়। এইচ-এস-
সি পরীক্ষা দিয়ে বসে আছি,
কি পড়বো না পড়বো এখনও ডিসাইড করিনি।
বেকার সময় তো, ঠিক মত কাটছে না। তাই তাজিন
যখন বলল ওর একটা ক্লাস এইটের
পড়ুয়া খালাতো বোনের জন্য একটা ভালো টিচার
দরকার, আমি কি মনে করে রাজি হয়ে গেলাম।
আসলে সময় কাটানোটাই আসল কারণ ছিল।
সন্ধ্যার পরে তেমন কিছু করার ছিল না। আর
তাছাড়া কখনো টিউশনি করিনি, এই
এক্সপিরিয়েন্সটারও তো দরকার ছিল। সব
ভেবে রাজি হয়ে গেলাম।
প্রথম দিন তাজিনই নিয়ে এলো ওর সাথে করে।
সেগুন বাগিচায় তমাদের বাড়ি, সুন্দর
দু'তলা বাড়ি। ওরা বেশ বনেদি বড়লোক, দেখলেই
বোঝা যায়। গেটের সামনে বেশ বড় একটা জামরুল
গাছ। ঢাকা ষহরে জামরুল গাছ সচরাচর দেখা যায়
না। গেটে দারোয়ান ছিল,
তাজিনকে দেখে দরজা খুলে দিল। তারপর নিজেই
এগিয়ে গিয়ে এক তলায় বেল টিপে দিল।
ছোট্টো একটা কাজের মেয়ে দরজা খুলে দিল।
আমরা ভিতরে গিয়ে বসলাম। সুন্দর
করে সাজানো ড্রয়িং রুম। যে গুছিয়েছে, বোঝাই
যায় তার রুচি সত্যিই সুন্দর। দেশ বিদেশের
নানারকম ভাস্কর্য, শো পিস আর পেন্টিং।
অনেকগুলো প্লেনের মডেল।
আমরা বসার একটু পরেই তমা হাজির। "আপু
কেমন আছো? এতোদিন পরে?"
তাজিন ঘাড় নেড়ে বলল, "ভালো, এই দেখ তোর
নতুন স্যার নিয়ে এসেছি। অনেক রাগী,
তোকে একদম সোজা করে দেবে।"
তমা বলল, "ইনি বুঝি আমার নতুন টিচার?"
বলেই সে কি হি হি হাসি।
আমি বেশ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম, এ কি বিপদ
রে বাবা! এটা হাসির কি হল? একটু পরেই একজন
মহিলা ঘরে ঢুকলো। মহিলা ঘরে ঢুকতেই মনে হল
ঘরের আলো যেন বেড়ে গেছে। প্রচন্ড সুন্দরী এক
মহিলা! কথা বার্তা যেমন সুন্দর, তেমনি স্মার্ট।
একদম অন্যরকম ভাবে কথা বলে,
কি মিষ্টি কন্ঠস্বর। আমাকে পরিচয় করিয়ে দিল
তাজিন। ওর বন্ধু দেখে আমাকে মহিলা অনেক
প্রশ্ন করলেন। কোথায় পড়ি, কি করি,
বাবা কি করেন, একদম ফুল প্রোফাইল, আর কি।
আমিও বেশ সুন্দর গুছিয়ে উত্তর দিলাম।
উনি বেশিরভাগ সময়ে ইংলিশ মেশানো বাংলায়
কথা বলছিলেন। বোঝা যায় হাইলি এডুকেটেড।
তবে তখনো আমি একটা জিনিস জানতান
না যেটা পরে জেনেছি।
সব কিছু ঠিকঠাক হয়ে গেল। আমি সপ্তাহে চারদিন
পড়াবো। ফ্রাইডে অফ্, আর
দিনগুলো ফ্লেক্সিবল। যেদিন
খুশি আসতে পারি তবে সন্ধ্যা সাতটার
পরে আসলে ভালো হয়। তমা খুব ফাঁকিবাজ
তবে অনেক ব্রিলিয়ান্ট।
পড়ানো শুরু করার পরেই বুঝতে পারলাম, তমা'র
টিউটার এত ঘন ঘন চেঞ্জ হয় কেন?
মেয়েটা একের পরে এক প্রশ্ন করতেই থাকে।
তবে আমিও বেশ ধৈর্য্য ধরে প্রশ্নের উত্তর
দেই, বকা ঝকা করি না। ও গল্প
করতে চাইলে গল্প করি। এক ঘন্টা করে পড়ানোর
কথা, বেশিরভাগ সময়েই পড়া শেষ
করতে করতে সাড়ে নয়টা বেজে যায়। রাত
বেশি হয়ে গেলে তমার আম্মু না খেয়ে যেতে দেন
না।
যেহেতু উনি তাজিনের খালা, তাই
আমারো আন্টি ডাকা উচিত, কিন্তু
এতো ইয়ং যে উনাকে আন্টি ডাকতে লজ্জা লাগে।
উনাকে দেখলে কেউ বলবে না যে উনার
এতো বড়ো একটা মেয়ে আছে। মেরে কেটে উনার
বয়স চব্বিশ পার করানো যাবে না। কিন্তু যেহেতু
উনার এতো বড়ো একটা মেয়ে আছে সেহেতু
নিশ্চয়ই তেত্রিশ কি চৌত্রিশ হবে উনার বয়স।
আমি উনাকে কোনোরকম সম্বোধন না করেই
কথা বলার চেষ্টা করলাম।
এতো দিন ধরে তমাকে পড়াচ্ছি, এখনো ওর
বাবাকে দেখলাম না। একদিন ফস্ করে জিজ্ঞেসই
করে বসলাম, "তমা, তোমার
আব্বুকে তো একদিনও দেখলাম না।
উনি বুঝি অনেক রাতে বাসায় ফেরেন
তমা সাথে সাথে বই বন্ধ করে বলে, " না স্যার,
আব্বু তো মেরিন ইঞ্জিনিয়র,
উনাকে ম্যাক্সিমাম সময়ই জাহাজে থাকতে হয়।
তবে আব্বু ছুটি পেলেই চলে আসে। তিন-চার মাস
পর পর আসেন, মাস খানেক থাকেন, আবার
চলে যান। এবার চার মাস পার হয়ে গেলো তাও
আব্বু আসছে না। বলেছে জাহাজ
নিয়ে ডেনমার্কে আছে।
ওখানে কি একটা ঝামেলা হয়েছে।
আসতে আরো মাস দুয়েক দেরি হয়ে যাবে।"
এখন বুঝতে পারলাম তমার আম্মু সবসময়
এতো উদাস থেকে কেন। জীবনের বেশিরভাগ
সময়টাই মহিলার
হয়তো এভাবে একা একা কাটাতে হবে। এর পর
থেকে কেন যেন আমিও উনাকে একটু
কম্পানি দেওয়ার চেষ্টা করতাম। কখনো সাতটার
আগে গিয়ে হাজির হয়ে যেতাম। উনি হয়তো তখন
টিভি দেখতেন বা ড্রয়িং রুম গোছাতেন।
বেশিরভাগ কাজই উনি নিজের হাতে করতেন।
তমার আম্মুর নাম ছিলো তাসরিন। গল্প
করতে করতে উনি অনেক কথাই বলতেন। উনার
ছোটো বেলার কথা, উনার এক ভাই পাইলট।
উনারা এক ভাই, এক বোন। তাহলে তাজিনের
মা উনার কে হন? আমি আর জিজ্ঞেস করি নি।
কথা প্রসঙ্গে উনাকে একদিন জিজ্ঞেস
করে ফেললাম, "আপনার বাংলাটা খুব অদ্ভুত,
আমি এরকম বাংলা আগে শুনি নি।"
উনি হেসে বললেন, "আমি কি খুব খারাপ
বাংলা বলি?
আমি বললাম, "না না, তা হবে কেন? আপনার
বাংলা খুব সুন্দর, আপনার ভয়েস অনেক মিষ্টি।
কিন্তু আপনার টানটা যেন কেমন অন্যরকম।"
উনি হেসে বললেন, "কেন, তাজিনের মা বুঝি খুব
ভালো বাংলা বলেন?"
আমি বললাম, "হ্যাঁ, আন্টি তো বেশ
ভালো বাংলা বলেন।"
উনি বললেন। "হবে হয়তো, ওর তো অনেক
আগে বিয়ে হয়ে গেছে।
তাছাড়া ওরা তো মঞ্জিলে থাকতো না।"
কথা শুনে কেমন যেন খটকা লাগলো, মঞ্জিল
মানে? আমি আর ঘাঁটালাম না।
পরে তাজিনকে ধরলাম, "এই শালি,
বলতো ঘটনাটা কি?"
প্রথমে তো ও বলতেই চায় না, পরে একটু একটু
করে বলল। আসলে ওরা হচ্ছে নবাবদের
একটা ব্র্যাঞ্চ। শুনে তো আমি আঁতকে উঠলাম,
বলে কি শালি? ওর নানা নাকি দুই বিয়ে করেছিল।
বড়ো ঘরে ছিল তমার মা, আর ছোটো ঘরে ছিল
তাজিনের মা। তাজিনের মা আবার ওর মায়ের বড়
সন্তান। ফ্যামিলিতে প্রবলেমের কারণে ওরা বড়
হয়েছে মঞ্জিলের বাইরে। আর
বাকিরা মোটামুটি জয়েন্ট ফ্যামিলির
মতো বড়ো হয়েছে একসাথে। পরে অবশ্য সব
ঠিকঠাক হয়ে যায়। ওদের মেন ল্যাঙ্গুয়েজ
নাকি উর্দু ছিলো। তাজিনের নানা নাকি এখনও
উর্দুতে কথা বলে, ভালো বাংলা বলতে পারেনা।
এসব শুনে তো আমার চক্ষু চড়কগাছ, বলে কি!
যাই হোক, সেদিন থেকে আমি তমা'র মায়ের
সাথে আরো বেশি সময় কাটাতে লাগলাম।
তমা বেশির ভাগ সময়েই আত্মীয়দের বাসায়
ঘুরতে চলে যেতো। কাজেই আমাকে অনেকক্ষন
বসে থাকতে হত। সেই সময়টা তমার মা অনেক
কথা বলতো আমাকে, ঠিক যেন এক বন্ধুর মতো।
উনার ষোলো বছর বয়সে বিয়ে হয়ে যায়, সতের
বছর বয়সে বাচ্চা। উনি দুঃখ করে বলেন, অনার
অনেক স্বপ্ন ছিল। অনেক লেখা পড়া করার
ইচ্ছা ছিল। সেগুলা কিছুই হয় নি। উনার
হাসব্যান্ড বেশির ভাগ সময় শিপে থাকে, উনাদের
মধ্যে একটা দূরত্ব হয়ে গেছে। আমিও যেন
বয়সের তুলনায় অনেক
বেশি বুঝতে শিখে গিয়েছিলাম। আসলে এতো কম
বয়সে এতো বেশি নারীসঙ্গ ভোগ
করেছি যে হয়তো নারীদেরকে অনেক
বেশি বুঝতে শিখে গিয়েছিলাম। মেয়েরা সবসময়
একজন ভালো শ্রোতা খোঁজে, যাকে সব
বলতে পারে। আর আমি বাজী রেখে বলতে পারি,
আমি একজন খুব ভালো শ্রোতা। তখন ব্রিটিশ
কাউন্সিলে একটা কোর্স করছি, কাজেই ইংলিশটাও
প্র্যাকটিস করা প্রয়োজন। তমা'র
মা মাঝে মাঝেই ইংলিশে প্রশ্ন করে বসে, আমিও
ফটাফট এনসার করে দি। আমরা দুজনেই একজন
অপরের কম্প্যানি খুব পছন্দ করতাম
তমার করুণ আকুতি। সবে ক্লাস এইটে পড়ে, এখন
থেকেই ফাজিলের চুড়ান্ত। আজকালকার
ছেলেমেয়েরা বোধহয় এরকমই। আমার
আগে কোনোদিনও টিউশনির অভিজ্ঞতা ছিলো না,
নিছক ঝোঁকের মাথায় এটা শুরু করি। আজকে এক
মাস পূর্ণ হবে, মাসের দুই তারিখ। বেতন পাওয়ার
সময়টাও হয়ে গেছে। জীবনের প্রথম নিজের
উপার্জন। ঘটনাটা তাহলে একটু খুলেই বলি।
আমার বন্ধু তাজিনের কাজিন হয়। এইচ-এস-
সি পরীক্ষা দিয়ে বসে আছি,
কি পড়বো না পড়বো এখনও ডিসাইড করিনি।
বেকার সময় তো, ঠিক মত কাটছে না। তাই তাজিন
যখন বলল ওর একটা ক্লাস এইটের
পড়ুয়া খালাতো বোনের জন্য একটা ভালো টিচার
দরকার, আমি কি মনে করে রাজি হয়ে গেলাম।
আসলে সময় কাটানোটাই আসল কারণ ছিল।
সন্ধ্যার পরে তেমন কিছু করার ছিল না। আর
তাছাড়া কখনো টিউশনি করিনি, এই
এক্সপিরিয়েন্সটারও তো দরকার ছিল। সব
ভেবে রাজি হয়ে গেলাম।
প্রথম দিন তাজিনই নিয়ে এলো ওর সাথে করে।
সেগুন বাগিচায় তমাদের বাড়ি, সুন্দর
দু'তলা বাড়ি। ওরা বেশ বনেদি বড়লোক, দেখলেই
বোঝা যায়। গেটের সামনে বেশ বড় একটা জামরুল
গাছ। ঢাকা ষহরে জামরুল গাছ সচরাচর দেখা যায়
না। গেটে দারোয়ান ছিল,
তাজিনকে দেখে দরজা খুলে দিল। তারপর নিজেই
এগিয়ে গিয়ে এক তলায় বেল টিপে দিল।
ছোট্টো একটা কাজের মেয়ে দরজা খুলে দিল।
আমরা ভিতরে গিয়ে বসলাম। সুন্দর
করে সাজানো ড্রয়িং রুম। যে গুছিয়েছে, বোঝাই
যায় তার রুচি সত্যিই সুন্দর। দেশ বিদেশের
নানারকম ভাস্কর্য, শো পিস আর পেন্টিং।
অনেকগুলো প্লেনের মডেল।
আমরা বসার একটু পরেই তমা হাজির। "আপু
কেমন আছো? এতোদিন পরে?"
তাজিন ঘাড় নেড়ে বলল, "ভালো, এই দেখ তোর
নতুন স্যার নিয়ে এসেছি। অনেক রাগী,
তোকে একদম সোজা করে দেবে।"
তমা বলল, "ইনি বুঝি আমার নতুন টিচার?"
বলেই সে কি হি হি হাসি।
আমি বেশ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম, এ কি বিপদ
রে বাবা! এটা হাসির কি হল? একটু পরেই একজন
মহিলা ঘরে ঢুকলো। মহিলা ঘরে ঢুকতেই মনে হল
ঘরের আলো যেন বেড়ে গেছে। প্রচন্ড সুন্দরী এক
মহিলা! কথা বার্তা যেমন সুন্দর, তেমনি স্মার্ট।
একদম অন্যরকম ভাবে কথা বলে,
কি মিষ্টি কন্ঠস্বর। আমাকে পরিচয় করিয়ে দিল
তাজিন। ওর বন্ধু দেখে আমাকে মহিলা অনেক
প্রশ্ন করলেন। কোথায় পড়ি, কি করি,
বাবা কি করেন, একদম ফুল প্রোফাইল, আর কি।
আমিও বেশ সুন্দর গুছিয়ে উত্তর দিলাম।
উনি বেশিরভাগ সময়ে ইংলিশ মেশানো বাংলায়
কথা বলছিলেন। বোঝা যায় হাইলি এডুকেটেড।
তবে তখনো আমি একটা জিনিস জানতান
না যেটা পরে জেনেছি।
সব কিছু ঠিকঠাক হয়ে গেল। আমি সপ্তাহে চারদিন
পড়াবো। ফ্রাইডে অফ্, আর
দিনগুলো ফ্লেক্সিবল। যেদিন
খুশি আসতে পারি তবে সন্ধ্যা সাতটার
পরে আসলে ভালো হয়। তমা খুব ফাঁকিবাজ
তবে অনেক ব্রিলিয়ান্ট।
পড়ানো শুরু করার পরেই বুঝতে পারলাম, তমা'র
টিউটার এত ঘন ঘন চেঞ্জ হয় কেন?
মেয়েটা একের পরে এক প্রশ্ন করতেই থাকে।
তবে আমিও বেশ ধৈর্য্য ধরে প্রশ্নের উত্তর
দেই, বকা ঝকা করি না। ও গল্প
করতে চাইলে গল্প করি। এক ঘন্টা করে পড়ানোর
কথা, বেশিরভাগ সময়েই পড়া শেষ
করতে করতে সাড়ে নয়টা বেজে যায়। রাত
বেশি হয়ে গেলে তমার আম্মু না খেয়ে যেতে দেন
না।
যেহেতু উনি তাজিনের খালা, তাই
আমারো আন্টি ডাকা উচিত, কিন্তু
এতো ইয়ং যে উনাকে আন্টি ডাকতে লজ্জা লাগে।
উনাকে দেখলে কেউ বলবে না যে উনার
এতো বড়ো একটা মেয়ে আছে। মেরে কেটে উনার
বয়স চব্বিশ পার করানো যাবে না। কিন্তু যেহেতু
উনার এতো বড়ো একটা মেয়ে আছে সেহেতু
নিশ্চয়ই তেত্রিশ কি চৌত্রিশ হবে উনার বয়স।
আমি উনাকে কোনোরকম সম্বোধন না করেই
কথা বলার চেষ্টা করলাম।
এতো দিন ধরে তমাকে পড়াচ্ছি, এখনো ওর
বাবাকে দেখলাম না। একদিন ফস্ করে জিজ্ঞেসই
করে বসলাম, "তমা, তোমার
আব্বুকে তো একদিনও দেখলাম না।
উনি বুঝি অনেক রাতে বাসায় ফেরেন
তমা সাথে সাথে বই বন্ধ করে বলে, " না স্যার,
আব্বু তো মেরিন ইঞ্জিনিয়র,
উনাকে ম্যাক্সিমাম সময়ই জাহাজে থাকতে হয়।
তবে আব্বু ছুটি পেলেই চলে আসে। তিন-চার মাস
পর পর আসেন, মাস খানেক থাকেন, আবার
চলে যান। এবার চার মাস পার হয়ে গেলো তাও
আব্বু আসছে না। বলেছে জাহাজ
নিয়ে ডেনমার্কে আছে।
ওখানে কি একটা ঝামেলা হয়েছে।
আসতে আরো মাস দুয়েক দেরি হয়ে যাবে।"
এখন বুঝতে পারলাম তমার আম্মু সবসময়
এতো উদাস থেকে কেন। জীবনের বেশিরভাগ
সময়টাই মহিলার
হয়তো এভাবে একা একা কাটাতে হবে। এর পর
থেকে কেন যেন আমিও উনাকে একটু
কম্পানি দেওয়ার চেষ্টা করতাম। কখনো সাতটার
আগে গিয়ে হাজির হয়ে যেতাম। উনি হয়তো তখন
টিভি দেখতেন বা ড্রয়িং রুম গোছাতেন।
বেশিরভাগ কাজই উনি নিজের হাতে করতেন।
তমার আম্মুর নাম ছিলো তাসরিন। গল্প
করতে করতে উনি অনেক কথাই বলতেন। উনার
ছোটো বেলার কথা, উনার এক ভাই পাইলট।
উনারা এক ভাই, এক বোন। তাহলে তাজিনের
মা উনার কে হন? আমি আর জিজ্ঞেস করি নি।
কথা প্রসঙ্গে উনাকে একদিন জিজ্ঞেস
করে ফেললাম, "আপনার বাংলাটা খুব অদ্ভুত,
আমি এরকম বাংলা আগে শুনি নি।"
উনি হেসে বললেন, "আমি কি খুব খারাপ
বাংলা বলি?
আমি বললাম, "না না, তা হবে কেন? আপনার
বাংলা খুব সুন্দর, আপনার ভয়েস অনেক মিষ্টি।
কিন্তু আপনার টানটা যেন কেমন অন্যরকম।"
উনি হেসে বললেন, "কেন, তাজিনের মা বুঝি খুব
ভালো বাংলা বলেন?"
আমি বললাম, "হ্যাঁ, আন্টি তো বেশ
ভালো বাংলা বলেন।"
উনি বললেন। "হবে হয়তো, ওর তো অনেক
আগে বিয়ে হয়ে গেছে।
তাছাড়া ওরা তো মঞ্জিলে থাকতো না।"
কথা শুনে কেমন যেন খটকা লাগলো, মঞ্জিল
মানে? আমি আর ঘাঁটালাম না।
পরে তাজিনকে ধরলাম, "এই শালি,
বলতো ঘটনাটা কি?"
প্রথমে তো ও বলতেই চায় না, পরে একটু একটু
করে বলল। আসলে ওরা হচ্ছে নবাবদের
একটা ব্র্যাঞ্চ। শুনে তো আমি আঁতকে উঠলাম,
বলে কি শালি? ওর নানা নাকি দুই বিয়ে করেছিল।
বড়ো ঘরে ছিল তমার মা, আর ছোটো ঘরে ছিল
তাজিনের মা। তাজিনের মা আবার ওর মায়ের বড়
সন্তান। ফ্যামিলিতে প্রবলেমের কারণে ওরা বড়
হয়েছে মঞ্জিলের বাইরে। আর
বাকিরা মোটামুটি জয়েন্ট ফ্যামিলির
মতো বড়ো হয়েছে একসাথে। পরে অবশ্য সব
ঠিকঠাক হয়ে যায়। ওদের মেন ল্যাঙ্গুয়েজ
নাকি উর্দু ছিলো। তাজিনের নানা নাকি এখনও
উর্দুতে কথা বলে, ভালো বাংলা বলতে পারেনা।
এসব শুনে তো আমার চক্ষু চড়কগাছ, বলে কি!
যাই হোক, সেদিন থেকে আমি তমা'র মায়ের
সাথে আরো বেশি সময় কাটাতে লাগলাম।
তমা বেশির ভাগ সময়েই আত্মীয়দের বাসায়
ঘুরতে চলে যেতো। কাজেই আমাকে অনেকক্ষন
বসে থাকতে হত। সেই সময়টা তমার মা অনেক
কথা বলতো আমাকে, ঠিক যেন এক বন্ধুর মতো।
উনার ষোলো বছর বয়সে বিয়ে হয়ে যায়, সতের
বছর বয়সে বাচ্চা। উনি দুঃখ করে বলেন, অনার
অনেক স্বপ্ন ছিল। অনেক লেখা পড়া করার
ইচ্ছা ছিল। সেগুলা কিছুই হয় নি। উনার
হাসব্যান্ড বেশির ভাগ সময় শিপে থাকে, উনাদের
মধ্যে একটা দূরত্ব হয়ে গেছে। আমিও যেন
বয়সের তুলনায় অনেক
বেশি বুঝতে শিখে গিয়েছিলাম। আসলে এতো কম
বয়সে এতো বেশি নারীসঙ্গ ভোগ
করেছি যে হয়তো নারীদেরকে অনেক
বেশি বুঝতে শিখে গিয়েছিলাম। মেয়েরা সবসময়
একজন ভালো শ্রোতা খোঁজে, যাকে সব
বলতে পারে। আর আমি বাজী রেখে বলতে পারি,
আমি একজন খুব ভালো শ্রোতা। তখন ব্রিটিশ
কাউন্সিলে একটা কোর্স করছি, কাজেই ইংলিশটাও
প্র্যাকটিস করা প্রয়োজন। তমা'র
মা মাঝে মাঝেই ইংলিশে প্রশ্ন করে বসে, আমিও
ফটাফট এনসার করে দি। আমরা দুজনেই একজন
অপরের কম্প্যানি খুব পছন্দ করতাম
Post a Comment
Click to see the code!
To insert emoticon you must added at least one space before the code.